মামুনুর রশীদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: নাগেশ্বরীতে ধানের ক্ষেতে পোকা দমনে প্রাকৃতিক ‘পাচিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।শুক্রবার ( ০৩-০৯-২০২১) কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রুইয়াপাড় কৃষি সমিতির উদ্যোগে মরা ডাল, বাঁশের আগা ও কঞ্চি পুঁতে দেয় কৃষকেরা। “পাচিং” পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধবভাবে ধানক্ষেতের পোকা আক্রমণ কমিয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায় বলে কৃষকদের আশা।

বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল, T- আকৃতির দণ্ড বা বাঁশের জটা প্রভৃতি খাড়াভাবে জমিতে পুঁতে পাখি বসার কিংবা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে পাচিং (Perching) বলে। যে সমস্ত পাখি পার্চিং এ বসে তাদের পার্চিং বার্ড (Perching Bird) বলা হয়। পার্চিং বার্ডের পায়ে ৪টি লম্বা, পাতলা আঙ্গুল থাকে। এরমধ্যে ৩টি সম্মুখে এবং ১টি পিছনের দিকে থাকে যা পাখি তার ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করতে পারে।

এ সমস্ত পাখির পিছনে আঙ্গুল তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হওয়ার কারণে তার উপর ভর করে স্বাধীনভাবে পার্চিং এ বসতে পারে। পৃথিবীতে ৫৯ গ্রোত্রের ৫১০০ প্রজাতির পার্চিং বার্ড দেখা গেলেও এশিয়া মাহাদেশে ফিঙ্গে পাখি (Black drongo) ধানের পোকা মাকড় দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধানের জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে পাচিং বেশ কার্যকরী।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালের প্রারম্ভে ধানচাষিদের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে পাচিংয়ের পরামর্শ প্রদান করা হয়। বর্তমানে ধানের জমিতে পোকামাকড় দমনে পাচিং একটি সফল কৃষকবান্ধব প্রযুক্তি। পাচিং করতে কৃষককে ধান চাষে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হয় না। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে গাছের ডাল প্রাপ্তি সহজলভ্য বিধায় পাচিং পদ্ধতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফসলি জমিতে কীটনাশকের অযাচিত ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ভাবে ফসল ফলাতে পাচিং পদ্ধতি বেশ সমাদৃত। রুইয়ার পাড় কৃষি সমিতির কোষাধ্যক্ষ সোলাইমান আলী জানান, পাচিং পদ্ধতির মাধ্যমে কীটনাশকের অযাচিত ব্যবহার কমবে, ফসলি উৎপাদন বাড়বে, পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে এবং নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ছাত্তার জানান, জমিতে এভাবে পাচিং করে রাখলে কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্নরকমের পাখি উড়ে এসে ডালের উপর বসে ও একটু পরপরই ধান গাছের মধ্যে ডুকে পোকা ধরে খাচ্ছে।

তাছাড়া যে জমিতে পোকা বেশি সে জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি। নাগেশ্বরী কৃষি অফিসের উপ সহকারী উদ্ভিদসংরক্ষণ কর্মকর্তা শ্রী মানিক চন্দ্র সেন মুঠোফোনে জানান, মূলত তিনটি ধাপে ফসল উৎপাদন বেশি করা যায়, তা হলো এলএলবি, লগো ও পাচিং পদ্ধতি। এলএলবি হচ্ছে ধান গাছ লাইন করে লাগানো, লগো মানে ১০ লাইন পর পর কিছু ফাঁক রাখা এবং পাচিং হচ্ছে পোকা নিবারণের জন্য জমিতে কঞ্চি পুঁতে রাখা এতে করে ফসল উৎপাদন বাড়বে।